“গণতন্ত্রের ষষ্ঠী পূজো “
-তন্ময় সিংহ রায়
বীর সুভাষের নিথর দেহের ভূখন্ডটার অসহায় অবস্থান আজ বৈচিত্রময় অসংখ্য মাছি ও শকুনের ঠিক নিচে। প্রায় পচা-গলা ভূখন্ডটার ভিতর থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলো খুবলে খুবলে অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত্র ও যকৃত থেকে তৃপ্তিসহকারে সংগ্রহ করছে পুষ্টিরস! জাতি ধর্ম নির্বিশেষে শুধু আমাদের অক্সিজেনকে স্বাধীন করার নিদ্রাহীন স্বপ্নে নিজের রক্তাবৃত হৃদপিন্ডটাকে হাতে নিয়ে জীবনকে পদতলে করে, অবর্ণনীয় লাঞ্ছনা, অপমান ও যন্ত্রণাকে মুহুর্মুহু সহ্য করেও বিষাক্ত রাজনীতির সি.এফ.সি’র ক্ষতিকারক প্রভাব থেকেও রেহাই পাননি তিনি! আজ বিংশ তার শেষ নিঃশ্বাসটা ত্যাগ করার পরেও রাজনীতি নির্গত সি.এফ.সি’র ক্রমবর্ধমান প্রভাবে বিশেষত খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলো মুমুর্ষুপ্রায়!
২৬/১১,পাঠানকোট ও উরির পর, ইংরিজি সাল ২০১৯, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি….আবার এক জ্বলন্ত নিদর্শন কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপুরায়। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স-এর কনভয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী বিস্ফোরণ! বেশিরভাগই ছিলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। হাই সিকিওর্ড জোনে খুব সাবলীলভাবেই প্রবেশ করে গেলো ৩৫০ কেজির বিস্ফোরকপূর্ণ একটা গাড়ি! …আত্মঘাতী ব্যক্তি ছাড়া বাকিরা সকলেই নির্বিঘ্নে ফিরে গেলো!…. কনভয় প্রটোকল অনুযায়ী ৩০ টার বেশি গাড়ি থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা, সেখানে গাড়ির মোট সংখ্যাটা ৭৮+….আড়াই হাজার সেনা জওয়ান তবুও তারা ছিল নিরাপত্তাহীন। জানা গেছে আর.ডি.এক্স বিস্ফোরনের তীব্রতা এতটাই ছিলো যে ১০-১২ কিলোমিটার পর্যন্ত সেই শব্দ মানুষের কানে বিকটভাবে পৌঁছেছে।
বাজারের সস্তা পণ্যে পরিণত হয়েছে গরীব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্বল্পদামী জীবন। যে গর্ভধারিণী মা-টা তার সোনার টুকরো বীর সন্তানকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখলো, সেই হতভাগিনী মা-টাই শুধু অনুভব করেছেন তাঁর বুকফাটা যন্ত্রণার মাত্রাটা! অনুভূতিহীন ফুলের মতন যে শিশুটা সারাজীবন তার বাবাকে চোখের সামনে অন্ধকারের অতল গভীরে তলিয়ে যেতে দেখলো, সেই স্নেহ মাখা পিতৃপ্রেমের পরম স্পর্শ সারাটাজীবন দেবে কোন রাজনৈতিক দল? নাকি টাকা দিয়ে কেনা যায় সেই স্পর্শ? যে অভাগিনী স্ত্রী-টার কপালের এক চিলতে লাল রঙটার মৃত্যু হল নিমেষেই, তিনি জানেন যন্ত্রণার পরিমাণটা! এ সিঁদুরটাই বা তাকে ফিরিয়ে দেবেন কোন নেতা? কোনো দুর্ঘটনা যদি বাস্তবে তার রূপকে দান করে তখনই আমরা হয়ে পড়ি উত্তেজিত ও আবেগপ্রবণ! আর বিশেষত ঠিক সেই মুহুর্তেই জন্ম নেয় শ-এ শ-এ কৌটিল্য। হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা, এটা করা উচিৎ, ওটা কেনো হয়নি?… রিখটার স্কেলে, কু-ঘটনার তীব্র নিন্দা করা প্রতিবাদীদের কম্পনের মাত্রাটা দুদিন পরেই হয়ে যায় সুইচড অফ্। টাটকা মৃত’র পরিবারগুলো তৎক্ষণাৎ ভেসে যায় প্রতিশ্রুতি, সমবেদনা ও সহানুভূতির অবিশ্রান্ত জলধারায়। দু’দিন পরেই ঝাপসা হয়ে যায় জীবন্ত স্মৃতিসহ সব রাজনীতি প্রদত্ত ভোট মার্কেটিং-এর প্রতিশ্রুতিগুলো, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে থাকে সাময়িক সহ+অনুভূতিগুলো। বেদনাকে শুধু মৃতদের পরিবারের জন্যে ফেলে রেখে চিরকালের মতন সান্নিধ্য ত্যাগ করে ‘সম’-গুলো।….. কিছুদিন স্বাভাবিক, আবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা! আবার উত্তেজনা, দু’টো মোমবাতি, এক চিলতে আবেগ! আবার ঝাপসা! এভাবেই চলছে জলচক্র। দেশাভ্যন্তরেই ফরাসী বিপ্লবটা আগে প্রয়োজন, কারণ…’সর্ষের মধ্যে ভূত’-টাও আজ ভাবনার জানালায় বড় বেশি উঁকিঝুঁকি মারে!……শেষাগত দেশের সংকটময় মুহুর্তগুলোতেও ইগোকে সপাটে জড়িয়ে ধরে বসে আছে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোই, পরিণাম…. একতায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প! সন্ত্রাসবাদ দমন তো পরে আগে রাজনৈতিক দুর্গন্ধমুক্ত ও একতাযুক্ত একটা দেশ আবিষ্কার প্রয়োজন। (ভূল ত্রুটি মার্জনীয় ও ব্যতিক্রম স্বীকার্য।)